দাঁড়াও পথিক - আকতার হোসেন
দাঁড়াও পথিক
আকতার হোসেন
ভ্রূণের মধ্যে আটকে আছি শত বছর ধরে। জঠর থেকে জঠরে হস্তান্তরিত হয়েছি, পেয়েছি শত মায়ের আদর। ভাবছি এবার গ্রিন সিগনাল দেব। বেরিয়ে আসবো অন্ধকার থেকে। পাশে দাঁড়াবো আতঙ্কগ্রস্থ পিতার। হাত ধরবো প্রিয়ভাষিণীর। ভয়ানক অশান্ত হতে যাচ্ছে তোমাদের শহর বন্দর গ্রাম। আমি প্রস্তুত। খুলে দাও কপিকল। সীমান্ত সীমানায় তাঁর হুকুমের অপেক্ষায় আমি।
প্রথমে যাবো টুঙ্গিপাড়া করবো সেলাম গেমাডাঙ্গা স্কুল। মধুমতীতে সাঁতার কেটে খুঁজবো শেখ মুজিবের গাঁয়ের গন্ধ। তারপর শিলাইদহ কুঠি বাড়ি থেকে সরাসরি যাব সীতাকুণ্ড। অমিত পুরুষ নুরালদীনের রংপুরে রাখবো পা। সেন্ট মার্টিনের পানি থেকে নামাবো বিষ। খাঁচায় পুষে রাখা অচিন পাখীর কণ্ঠ শুনে আসবো। বাংলাদেশ না হলে অন্য কোথাও নামবো না, অন্য গ্রহ নক্ষত্র করবো না স্পর্শ। ফিরে আসবো সেই বাংলাদেশ থেকে যতদিন দেখতে পারি দেখব তাল বেল সুপারির দেশ। রহিমুদ্দিনের ছোট্ট বাড়ি যাব মুড়কি খেতে। পড়ে থাকা রাইফেল তুলে নিয়ে ট্রিগারে টিপ দিব। মরুক শালার আশি বছরের শত্রু -তাতে কি। বয়স মানে না শত্রু মিত্র খেলা। শুধু ভালোবাসার বয়স নির্ধারিত। আজন্ম তার সীমানা। বাকি সব সুতোয় বাঁধা গুটি গুটি তসবি চিহ্ন।
জন্ম নিয়েই স্কুল পড়ুয়া কিশোর হব। তারপর সুপ্রিমকোর্টের ভাস্কর্য নিয়ে বিভ্রান্তি মেটাবো। মুছে দিব সংখ্যালঘু শব্দটি। হেলতে দুলতে থাকা চব্বিশ হাজার নত শিরকে ইস্পাত সম কঠিন করে তুলবো। ওরাও হবে বাংলাদেশের অংশ। ফিরে এলে ফিরিয়ে নেব, না হলে কচুকাটা করবো আগাছার মত। ফাঁসি দিলে বলবো রশি বদলাও। ক্ষুদিরামের দড়িতে পিচ্ছিল মোম লাগাও সেই দড়িতে মরবো।
একদিনে বাড়ে নি এই জিদ। ক্ষোভে দুঃখে কেঁদেছি মায়ের গর্ভনালীতে বসে। বছরে ১৫২ জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে, ধর্ষণের পর ৭৪০ জন নারীকে হত্যা করা হলে কি কাজে লাগবে নিরাপদ আশ্রয়? তার চেয়ে ভাল বাংলাদেশ নামের পৃথিবীতে যাব। মানব দেয়ালে ঝুলিয়ে দেব নির্যাতনের সাম্প্রতিক চিত্র। ইতিহাসে গড়িয়ে কোলে তুলে নেব অগণিত যুদ্ধশিশু। তাদের মাতাদের, তাদের ভগ্নিদের এবং শুষ্ক হাড়গুলো থেকে ধূলিকণা ঝেড়ে নিয়ে যাব বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। তারপর... অভিযান চালাবো জঙ্গি আস্তানায়।
আজ অহেতুক এই বোমারুদের উত্তেজনা। অকারণে বিষ-বাষ্প ছড়ানো। বুঝি না কেন এই লম্ফঝম্প। যিনি সুরক্ষিত, যার প্রয়োজন নেই এক বিন্দু হেফাজত তাঁকে যদি কেউ হেফাজত করতে চায় - ঘি ঢেলে দেব সেইসব কাঠ পুতুলদের মুখে। তারপর যাব সুকান্তের কাছে। যিনি রেখে দিয়েছেন দেশলাইয়ের কাঠি সংগোপনে। আগামীর জন্যে।
এতদিনে হয়তো সবুজ হয়ে যেত জীবনান্দের জনপদ। বেড়ে যেত গোলাপ বিক্রয়। গার্মেন্টসগুলো শূন্য হয়ে ভরে যেত ব্যাংক অফিস আদালত। অথচ আজও দেখি বারুদের গন্ধ তাও তারই জন্য যার গন্ধ নেই, রঙ নেই, নেই সাহায্যের চিৎকার। পিছিয়ে পড়লে থেমে যাবে সোনায় মোড়ানো স্বপ্ন। যে করেই হোক কুয়াশাচ্ছন্ন কুণ্ডে আলো দিতে হবে। আজই। বলতে হবে তোমরা জরায়ুর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তারই জন্য বাঁচো। একাত্তরের পর কেউ একাট্টা শহীদ হবে না বাংলাদেশে। একটাই সময় ছিল সেই - বাকী সব অসময়।
এখনও কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্যটি করুন!